মাজরা পোকা ধান ফসলের কান্ডের অভ্যন্তরে ভক্ষণকারী একটি ক্ষতিকর পোকা।
মাজরা পোকার কীড়া গাছের কান্ডের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে ও ভিতর থেকে কান্ডকে
কুড়ে কুড়ে খায়। অনেকের ধারণা কান্ডের মাইজ বা মধ্যখানে বা মধ্যে আক্রমন করে
বিধায় এর নাম মাজরা পোকা রাখা হয়েছে। মাজরা পোকার আক্রমণে সাধারণতঃ ১৩
থেকে ২৬ ভাগ ফলন কম হতে পারে। ব্যাপক আক্রমণ হলে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত
ফলনের ঘাটতি হতে পারে। বাংলাদেশে ধান ফসলের জন্য ক্ষতিকর তিনটি প্রজাতির
মাজরার পোকা আছে। এগুলো হলো হলুদ মাজরা, কালমাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা
পোকা । এছাড়াও সাদা প্রজাতির মাজরা ইদানিং পাওয়া যাচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী
প্রায় ৫০ প্রকারের মাজরা পোকা পাওয়া যায়। তবে হলুদ মাজরা পোকা ধান ফসলের
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে।মাজরা পোকার দমন ব্যবস্থাপনাঃমাজরা
পোকা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পোকার স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিলে খুব সহজেই
ইহা দমন করা যায়। শুরুতেই পুর্ণাঙ্গ মাজরা পোকা দমনে পার্চিং বা ডাল পুতে
পাখি বসার বন্দোবস্ত করে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। হাতজাল ও
আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে মাজরা পোকার মথ দমন করা যায়। এতে করে পরবর্তী
পর্যায়গুলো স্বাভাবিকভাবেই মোকাবিলা করা সহজ হয়। মাজরা পোকার ডিম নষ্ট করার
ক্ষেত্রে ধানের পাতা ক্লিপিং বা কেটে নেয়া, ব্যাম্বো বুস্টার ব্যবহার করা,
পলি ব্যাগ রেয়ারিংসহ হাতে ও পায়ে পিষে ডিমগুলো নষ্ট করা যেতে পারে। মাজরা
পোকার সবচেয়ে ক্ষতিকর স্তুর কীড়া বা লার্ভা দমন করার জন্য সরাসরি কোন
পদ্ধতি ব্যবহার করার উপায় নেই। কারণ লার্ভা বা কীড়াগুলো কুশির ভিতরে থাকে।
যা সহজে দেখা যায়না তবে আক্রান্ত কুশি এবং গোছা তুলে ফেলতে হবে। মাজরা
পোকার পিউপা বা পুত্তলী অবস্থায় ধ্বংস করার জন্য ধান কাটার পর জমিতে থাকা
নাড়া পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, ধান কাটার সময় গোড়া
থেকে কেটে তুলে নেয়া। জমি চাষের সময় খুব ভালোভাবে মাটি চাষ করতে হবে।
সমকালীন চাষাবাদ পোকা মাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। মাজরার ডিমযুক্ত চারা বা আক্রান্ত চারা রোপন না করা। চারার অভাব হলে
তবেই কেবল আক্রান্ত চারার মাথা কেটে ধ্বংস করতে পারেন।পোকা ও রোগ
প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার করতে হবে। আগাম ও স্বল্প জীবনকালের ধান যেমন ব্রি
ধান৩২, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৬২ সহ বিনা ৭ ধান চাষ করতে পারেন। অতিরিক্ত
নাইট্রোজেন সার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সুষম সার ব্যবহার করতে
হবে। প্রাকৃতিকভাবেও মাজরা পোকা ধ্বংস করা যায়। লেডি বার্ড বিটল,
মিরিড বাগ, লম্বাশুড় উড়চুঙ্গা, লম্বাশুড় ঘাসফড়িং, মিরিড বাগ এসব পোকা মাজরা
পোকার ডিম খায়। এয়ার উইগ, ক্যারাবিড বিটল, মাইক্রোভেলিয়া, মেসোভেলিয়া,
ওয়াটার স্ট্রাইডার, ওয়াটার বোটম্যান, বিভিন্ন জাতের মাকড়সা যথা নেকড়ে
মাকড়সা, লিনক্স, লম্বামুখী ও অর্ব মাকড়সা মাজরা পোকার কীড়া খায়। প্রেয়িং
মেনটিড, পাখি, মাছ, ব্যাঙ, ড্যামসেল ফ্লাই, ড্রাগন ফ্লাই এসব প্রাণীরা
মাজরা পোকার মথ খেয়ে থাকে। পাখি মাজরা পোকার পুত্তলী খায়। তাছাড়া
কিছু পরজীবী পোকা রয়েছে যথা ট্রাইকোগ্রামা, টেলিনোমাস, টেট্রাটিকাস এসব
মাজরা পোকার ডিমকে আক্রান্ত করে নষ্ট করে। ক্যারপস, কোটেশিয়া এসব মাজরা
পোকার কীড়াকে বিষাক্ত করে মেরে ফেলে। জ্যান্থোপিমলা, টেমিলোসা,
স্টেনোব্রাকন এসব মাজরা পোকার পুত্তলীকে নষ্ট করে। এ ব্যাপারে কৃষক ভাইয়েরা
আপনারা সরাসরি পরজীবি পোকার কোন ব্যবস্থা নিতে না পারলেও বালাইনাশক
ব্যবহারে সচেতন হলে এসব পরজীবি প্রাণীকুল বেঁচে থেকে সহজেই উপকারে আসতে
পারে। আপনার ধান ক্ষেতে কুশি অবস্থায় যদি ১০ থেকে ১৫% কুশি
ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মরাডিগ এবং থোড়ের পর থেকে শিষ বের হওয়া পর্যন্ত সময়ে ৫%
কুশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কেবলমাত্র তখনি কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু
মাজরা পোকার কীড়া গাছের কান্ডের ভিতরে অবস্থান করে তাই সিস্টেমিক জাতীয়
বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। কীটনাশক হিসেবে কার্বোফুরান, এসিফেট,
কার্বোসালফান, কারটাপ এসব গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া
ইদানিং থায়ামেথোস্কেম ও ক্লোরানিলিপ্রল গ্রুপের কীটনাশক পরিমিত মাত্রায়,
সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো উপকৃত হচ্ছে।
উত্তর সমূহ
মাজরা পোকা ধান ফসলের কান্ডের অভ্যন্তরে ভক্ষণকারী একটি ক্ষতিকর পোকা। মাজরা পোকার কীড়া গাছের কান্ডের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে ও ভিতর থেকে কান্ডকে কুড়ে কুড়ে খায়। অনেকের ধারণা কান্ডের মাইজ বা মধ্যখানে বা মধ্যে আক্রমন করে বিধায় এর নাম মাজরা পোকা রাখা হয়েছে। মাজরা পোকার আক্রমণে সাধারণতঃ ১৩ থেকে ২৬ ভাগ ফলন কম হতে পারে। ব্যাপক আক্রমণ হলে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত ফলনের ঘাটতি হতে পারে। বাংলাদেশে ধান ফসলের জন্য ক্ষতিকর তিনটি প্রজাতির মাজরার পোকা আছে। এগুলো হলো হলুদ মাজরা, কালমাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা পোকা । এছাড়াও সাদা প্রজাতির মাজরা ইদানিং পাওয়া যাচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৫০ প্রকারের মাজরা পোকা পাওয়া যায়। তবে হলুদ মাজরা পোকা ধান ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে।মাজরা পোকার দমন ব্যবস্থাপনাঃমাজরা পোকা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পোকার স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিলে খুব সহজেই ইহা দমন করা যায়। শুরুতেই পুর্ণাঙ্গ মাজরা পোকা দমনে পার্চিং বা ডাল পুতে পাখি বসার বন্দোবস্ত করে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। হাতজাল ও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে মাজরা পোকার মথ দমন করা যায়। এতে করে পরবর্তী পর্যায়গুলো স্বাভাবিকভাবেই মোকাবিলা করা সহজ হয়। মাজরা পোকার ডিম নষ্ট করার ক্ষেত্রে ধানের পাতা ক্লিপিং বা কেটে নেয়া, ব্যাম্বো বুস্টার ব্যবহার করা, পলি ব্যাগ রেয়ারিংসহ হাতে ও পায়ে পিষে ডিমগুলো নষ্ট করা যেতে পারে। মাজরা পোকার সবচেয়ে ক্ষতিকর স্তুর কীড়া বা লার্ভা দমন করার জন্য সরাসরি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করার উপায় নেই। কারণ লার্ভা বা কীড়াগুলো কুশির ভিতরে থাকে। যা সহজে দেখা যায়না তবে আক্রান্ত কুশি এবং গোছা তুলে ফেলতে হবে। মাজরা পোকার পিউপা বা পুত্তলী অবস্থায় ধ্বংস করার জন্য ধান কাটার পর জমিতে থাকা নাড়া পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, ধান কাটার সময় গোড়া থেকে কেটে তুলে নেয়া। জমি চাষের সময় খুব ভালোভাবে মাটি চাষ করতে হবে। সমকালীন চাষাবাদ পোকা মাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাজরার ডিমযুক্ত চারা বা আক্রান্ত চারা রোপন না করা। চারার অভাব হলে তবেই কেবল আক্রান্ত চারার মাথা কেটে ধ্বংস করতে পারেন।পোকা ও রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার করতে হবে। আগাম ও স্বল্প জীবনকালের ধান যেমন ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৬২ সহ বিনা ৭ ধান চাষ করতে পারেন। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবেও মাজরা পোকা ধ্বংস করা যায়। লেডি বার্ড বিটল, মিরিড বাগ, লম্বাশুড় উড়চুঙ্গা, লম্বাশুড় ঘাসফড়িং, মিরিড বাগ এসব পোকা মাজরা পোকার ডিম খায়। এয়ার উইগ, ক্যারাবিড বিটল, মাইক্রোভেলিয়া, মেসোভেলিয়া, ওয়াটার স্ট্রাইডার, ওয়াটার বোটম্যান, বিভিন্ন জাতের মাকড়সা যথা নেকড়ে মাকড়সা, লিনক্স, লম্বামুখী ও অর্ব মাকড়সা মাজরা পোকার কীড়া খায়। প্রেয়িং মেনটিড, পাখি, মাছ, ব্যাঙ, ড্যামসেল ফ্লাই, ড্রাগন ফ্লাই এসব প্রাণীরা মাজরা পোকার মথ খেয়ে থাকে। পাখি মাজরা পোকার পুত্তলী খায়। তাছাড়া কিছু পরজীবী পোকা রয়েছে যথা ট্রাইকোগ্রামা, টেলিনোমাস, টেট্রাটিকাস এসব মাজরা পোকার ডিমকে আক্রান্ত করে নষ্ট করে। ক্যারপস, কোটেশিয়া এসব মাজরা পোকার কীড়াকে বিষাক্ত করে মেরে ফেলে। জ্যান্থোপিমলা, টেমিলোসা, স্টেনোব্রাকন এসব মাজরা পোকার পুত্তলীকে নষ্ট করে। এ ব্যাপারে কৃষক ভাইয়েরা আপনারা সরাসরি পরজীবি পোকার কোন ব্যবস্থা নিতে না পারলেও বালাইনাশক ব্যবহারে সচেতন হলে এসব পরজীবি প্রাণীকুল বেঁচে থেকে সহজেই উপকারে আসতে পারে। আপনার ধান ক্ষেতে কুশি অবস্থায় যদি ১০ থেকে ১৫% কুশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মরাডিগ এবং থোড়ের পর থেকে শিষ বের হওয়া পর্যন্ত সময়ে ৫% কুশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কেবলমাত্র তখনি কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু মাজরা পোকার কীড়া গাছের কান্ডের ভিতরে অবস্থান করে তাই সিস্টেমিক জাতীয় বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। কীটনাশক হিসেবে কার্বোফুরান, এসিফেট, কার্বোসালফান, কারটাপ এসব গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ইদানিং থায়ামেথোস্কেম ও ক্লোরানিলিপ্রল গ্রুপের কীটনাশক পরিমিত মাত্রায়, সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো উপকৃত হচ্ছে।